সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ভারতকে বদলে দিয়েছে সৌরভ : সেলিম মালিক

ভারতকে বদলে দিয়েছে সৌরভ : সেলিম মালিক

স্বদেশ ডেস্ক: ইডেনের শ্বাস প্রশ্বাসে এখনও জড়িয়ে রয়েছেন তিনি। থাকবেন না-ই বা কেন! ১৯৮৭ সালের ১৮ †de&ªyqvix এই ইডেনেই যে এক রূপকথার জন্ম দিয়েছিলেন এই প্রাক্তন পাক-তারকা। মাত্র ৩৬ বলে তাঁর ৭২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস ভারতের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছিল। ইডেনে সেটাই ছিল প্রথম ওয়ানডে। সে দিনের বছর চব্বিশের তরুণ সেলিম মালিক এখন ক্রিকেট থেকে অনেক দূরে। ইডেনের গোলাপি টেস্টের স্ফুলিঙ্গ ছুঁয়ে গিয়েছে তাঁকেও। ১৭০০ কিলোমিটার দূরে লাহৌরে বসেও ইডেন নিয়ে নস্ট্যালজিক প্রাক্তন তারকা। এক্সক্লুসিভ সাক্ষাত্কারে উঠে এল নানা প্রসঙ্গ। তবে আফসোস একটাই, বাংলাটা ঠিক আসে না।
প্রশ্ন: ইডেন গার্ডেন্সের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে আপনার নাম। বুঝতেই পারছেন কেন বলছি।
সেলিম মালিক: (হেসে) হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি। ’৮৭ সালের সিরিজে ইডেনের ওই ম্যাচটার কথা ভোলা সম্ভবই নয়। সেই ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত এখনও আমার চোখে ভাসে। ভারতে যাওয়ার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে আমাদের খেলা ছিল। সেই সিরিজে চোট পেয়েছিলাম। চোট সারিয়ে ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ভাল খেলে ভারত সফরের দলে জায়গা পাই। ইডেনের ওই ম্যাচের আগে তেমন রানও পাইনি। ম্যাচের আগের রাতে কয়েক জন আমাকে বলল, তোমাকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এটাই তোমার শেষ ম্যাচ। সে সব শুনে আমার মন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ম্যাচে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা আমাদের খুব পিটিয়েছিল। শ্রীকান্ত সেঞ্চুরি করেছিল। ক্যাপ্টেন ইমরান খানও মার খেয়েছিল। মেজাজ খারাপ ছিল সবারই। ব্যাট করতে নামার আগে ইমরান আমাকে বলল, তুমি তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামবে। আমি মাথা নাড়লাম। ওপেন করতে নেমে রামিজ রাজা ও ইউনিস আহমেদ খুব স্লো ব্যাটিং করল। রামিজ আউট হওয়ার পরে ব্যাট করতে নামার কথা ছিল আমার। কিন্তু, ক্যাপ্টেন ম্যাচ চলাকালীন পরিকল্পনা বদলে ফেলেন। ইমরান প্রায়ই এই রকম করতেন। তিন নম্বরে না নেমে প্যাড পরে আমি বসেই রয়েছি। এ দিকে একের পর এক ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাচ্ছে। আমি যখন ব্যাট করতে নামছি, তখন ইমরান ফিরে আসছেন। ওঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, কী করব? হাত নেড়ে দেখালেন, যা ইচ্ছা করো। ভারতের হয়ে তখন গলা ফাটাচ্ছে ইডেনের গ্যালারি। দর্শকরা ধরেই নিয়েছে, এই ম্যাচ বের করা পাকিস্তানের কম্মো নয়। মনিন্দর সিংহের প্রথম বলটাই হাঁটু মুড়ে চালালাম। বল গ্যালারিতে। ওই শটটা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল। তার পরে যা যা করেছিলাম, সব ঠিকঠাক হয়েছিল। একেক দিন এ রকমই হয়। আমরা যখন জয়ের দোরগোড়ায়, তখন ইডেনে পিন ড্রপ সাইলেন্স। ওই ইনিংসের পরে আমাকে আর দেশে ফিরে যেতে হয়নি। হায়দরাবাদে পরের ম্যাচে আমি ৮৪ রান করেছিলাম। কিন্তু, ইংল্যান্ডে গিয়ে আবার আমাকে সাত নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হয়। পাকিস্তান ক্রিকেটে আমার ব্যাটিং অর্ডার কোনওদিনই স্থির ছিল না। সে ভাবে মর্যাদা পেলাম না। কখনও নীচে, কখনও উপরে আমাকে ব্যাট করতে পাঠানো হত। ১৯৯২ বিশ্বকাপ ফাইনালে শেষ বলটা খেলার জন্য আমি নেমেছিলাম।
প্রশ্ন: ক্রিকেটমহলে একটা কথা প্রচলিত রয়েছে। পাকিস্তান বোলারদের জন্ম দেয়। আর ভারত ব্যাটসম্যানদের। যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদবরা কিন্তু এখন ধারণা বদলে দিয়েছেন। আপনার সময়ে বা আরও আগে শামিরা যদি দেশের হয়ে খেলতেন, তা হলে পাকিস্তানকে কি সহজেই হারিয়ে দিত ভারত?
সেলিম মালিক: মহম্মদ শামিকে এখন দেখে খুব ভাল লাগছে। রিভার্স সুইং বেশ ভাল করে। (হাসতে হাসতে) ওয়াসিম (আক্রম) আমাদের আসল অস্ত্র শিখিয়ে দিয়েছে শামিকে। রিভার্স সুইং তো আমাদেরই সম্পত্তি ছিল। শামি এখন রিভার্স সুইংয়ে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। শামি-ইশান্তরা আমাদের সময়ে বা তারও আগে ভারতের হয়ে খেললে পাকিস্তানের কাজ কঠিন হয়ে যেত, এ বিযয়ে কোনও সন্দেহই নেই। তাই বলে আগে কি ভারতে কোনও বোলার ছিল না? নিশ্চয় ছিল। কপিল দেবের মতো ওই রকম একজন বোলার ছিল। আরও কয়েকজন ভাল বোলার ছিল। কিন্তু ভারতের এখনকার বোলিং আক্রমণকে বেশ লাগছে। ক্রিকেটের প্রতিটি বিভাগে ভারত এখন উন্নতি করেছে। তার ফলও পাচ্ছে।
প্রশ্ন: গোলাপি বলে ইডেন টেস্ট নিশ্চয় দেখেছেন? আপনার কি মনে হয় দিন-রাতের টেস্টই ভবিষ্যৎ?
সেলিম মালিক: দেখুন, ক্রিকেটে তো অনেক পরিবর্তনই হয়েছে। টি টোয়েন্টি এসেছে। এখন টি টেন হয়। গোলাপি বলে এখন দিন-রাতের টেস্ট খেলা হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, মাঠে দর্শক টানা। এই ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা করা ভাল। পাকিস্তানও গোলাপি বলে খেলেছে। এক্সপেরিমেন্ট যদি ভালর জন্য হয়, তা হলে অবশ্যই তা করা উচিত। ভারতে ক্রিকেট খুবই জনপ্রিয় খেলা। সমর্থকরা মাঠে আসেন। দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচ দেখতে ইডেন ফুল হাউজ ছিল। এগুলো টেস্ট ক্রিকেটের জন্য ভাল লক্ষণ।
প্রশ্ন: ভারতীয় ক্রিকেট কিন্তু পাকিস্তানকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। আক্রম-ওয়াকার-শোয়েব আখতারের মতো পেসার উঠে আসছে না কেন? হঠাৎ কী হল আপনাদের ক্রিকেটে?
সেলিম মালিক: যাঁরা জীবনে কোনও দিন সাফল্য পায়নি, ক্রিকেটীয় বুদ্ধি নেই, তাঁরা এখন আমাদের দেশে ক্রিকেট চালাচ্ছে। ঠিক লোকের হাতে না পড়ায় পাকিস্তান ক্রিকেট পিছিয়ে যাচ্ছে। আমার আশঙ্কা, আগামী কয়েক বছরে আরও পিছিয়ে পড়বে দেশের ক্রিকেট। পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিকাঠামো ভাল নয়। আপনাদের দেশে ঘরোয়া ক্রিকেটে ক’টা দল খেলে বলুন? পাকিস্তানে সেই সংখ্যাটা ক্রমশ কমছে। এখন দলের সংখ্যা মাত্র ৬। এই ছ’টা দল দিয়ে কী হবে বলতে পারেন? প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা সুযোগ পাবে কী করে? আমাদের ক্রিকেটে এত স্বজনপোষণ যে, প্রতিভাবান ক্রিকেটাররাই হারিয়ে যায়। তবে ইতিবাচক দিকও রয়েছে। নাসিম শাহের মতো ক্রিকেটার উঠে এসেছে। দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে ক্রিকেট সম্পর্কে ভাল জ্ঞান যাঁদের রয়েছে, তাঁদেরই চেয়ারে বসাতে হবে। ‘দাদা’ এখন আপনাদের বোর্ড প্রেসিডেন্ট। দেখবেন আপনাদের ক্রিকেট আরও উন্নতি করবে।
প্রশ্ন: ‘দাদা’র প্রসঙ্গই যখন তুললেন, তখন একটা কথা জিজ্ঞাসা না করে পারছি না। ‘দাদা’র ক্যাপ্টেন্সিতে আপনি তো ভারতকে দেখেছেন। অন্য অধিনায়কের সময়েও ভারতকে দেখেছেন। কার সময়ে ভারতকে বেশি আগ্রাসী দেখিয়েছে?
সেলিম মালিক: আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে সৌরভ সম্পর্কে দুটো কথা জিজ্ঞাসা করি। ‘দাদা’ কেমন আছে? ওকে আমার শুভেচ্ছা জানাবেন। ‘দাদা’ আমার খুব পছন্দের একজন ক্রিকেটার। সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিত। ওর সময়ে ভারতীয় দলকে বেশি আগ্রাসী দেখিয়েছে। বিদেশের মাঠে জেতার জন্য ভারতের খিদে বেড়ে গিয়েছিল সৌরভের ক্যাপ্টেন্সিতেই। আগে ভারতকে দেখে মনে হত, চাপে রয়েছে। ‘দাদা’ আসার পরে ভারতীয় ক্রিকেটের ছবিটা সব অর্থেই বদলে যায়। সবার ভিতর থেকে ভয় ব্যাপারটা দূর করে দিতে পেরেছিল ‘দাদা’। এখানেই ওর সাফল্য। (হাসতে বাসতে) আপনি আমার হিন্দি বুঝতে পারছেন তো? আমি ‘দাদা’র বাংলা ভাষা জানি না ঠিকই, তবে একটা কথা শিখে নিয়েছি, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ (হাসি)।
প্রশ্ন: আচ্ছা, টরোন্টোতে সৌরভের বলে আপনি বারবার আউট হতেন কেন?
সেলিম মালিক: আমি তো একবার মদনলালকে বলেছিলাম, তোমরা আর বোলার পেলে না! কাদের নিয়ে এখানে (টরোন্টো) খেলতে এসেছো? দেবাশিস মোহান্তি টরোন্টোর পিচে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ওকে দেখে মনে হয়েছিল, বিশ্বের সেরা বোলার। সৌরভের বল টরোন্টোতে খেলাই যায়নি। অথচ ‘দাদা’ তো সে রকম ভয়ঙ্কর বোলার ছিল না। টরোন্টোর পিচ খুব খারাপ ছিল। একটা বল নেমে যায় তো একটা বল হঠাৎ করে লাফিয়ে ওঠে। ওই পিচে কি খেলা যায় নাকি? ঠিকঠাক পিচ তৈরি না করে ভারত আর পাকিস্তানকে লড়িয়ে দেওয়া হত।
প্রশ্ন: আপনি একটু আগে বললেন, পাকিস্তানের ক্রিকেটে সফল ক্রিকেটারদের আনা উচিত। ইমরান খান এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। উনিই তো দেশের ক্রিকেটের হাল ফেরাতে পারেন…
সেলিম মালিক: ক্রিকেটের দিকে দৃষ্টি দেওয়া ইমরান খানের পক্ষে এখন সম্ভবই নয়। অন্যান্য ইস্যু আগে সামলাক, তার পরে ক্রিকেট নিয়ে ভাবনাচিন্তা করবে।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপ এলেই আপনাদের কী হয়? ভারতের কাছে প্রতিবার হারেন কেন? ১৯৯২ সালে আপনারা চ্যাম্পিয়ন হলেন। সে বারও ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। এ বারও সেই একই রেজাল্ট।
সেলিম মালিক: এর কারণ আমার জানা নেই। অনেক ভাবনাচিন্তা করেছি। কিন্তু, উত্তর খুঁজে পাইনি। এখন শক্তির দিক থেকে দুর্বল হয়ে গিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু আমাদের সময়ে বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হারের কারণ আমার মাথায় আসে না। শারজায় যেমন একসময়ে ভারত কেবল হারত পাকিস্তানের কাছে। বিশ্বকাপে তেমনই ভারতের কাছে হারে পাকিস্তান। দেশের ক্রিকেটারদের মজ্জায় হয়তো ঢুকে গিয়েছে, আর যাই হোক না কেন, বিশ্বকাপে ভারতকে হারানো সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: ক্রিকেট থেকে অনেক দূরে আপনি। কী করেন এখন?
সেলিম মালিক: ক্রিকেটের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্কই নেই। আমি এখন ব্যবসা করি। কনস্ট্রাকশনের কাজের সঙ্গে যুক্ত।
প্রশ্ন: মাঠে খেলা দেখতে যান? শ্রীলঙ্কা কয়েকদিন আগে তো পাকিস্তানে গিয়েছিল। দেখেননি খেলা?
সেলিম মালিক: টেলিভিশনে দেখেছি। মাঠে গিয়ে দেখা হয়নি। আসলে পাকিস্তানে প্রাক্তন ক্রিকেটারদের কোনও সম্মান নেই। শ্রদ্ধা দেখিয়ে কেউ একটা টিকিটও দেয় না। ভারতে কিন্তু প্রাক্তন ক্রিকেটারদের সম্মান দেওয়া হয়, শ্রদ্ধা করা হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877